‘লাইলাতুল কদর’ আরবি শব্দ। শবে-কদর 'লাইলাতুল কদর' এর ফারসি শব্দ। শতাব্দীর পর শতাব্দী মোগল শাসন এ উপমহাদেশে পার্সিয়ান রাজ ভাষার উপস্থিতির কারণে ধর্ম, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং ন্যায়বিচারের অনেক ফার্সি শব্দ আমাদের সংস্কৃতির সমার্থক হয়ে উঠেছে। লাইলাতুল কদরের ফার্সি পরিভাষা শব-ই-কদর সাধারণ মানুষের কাছে বেশি পরিচিত।
‘শব’ অর্থ রাত, এবং আরবি শব্দ ‘লাইলাতুন’ এর অর্থ রাত বা রাত। প্রশংসা মানে সম্মানিত, গৌরবময়। সুতরাং লাইলাতুল কদর অর্থ সম্মানিত রাত বা মহিমান্বিত রাত।
কুরআন তেলাওয়াত করা:
এই রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল। মানব জাতির এই মহান নেয়ামতের কারণেই এই রাতে এত মর্যাদা ও পুণ্য রয়েছে। কোরআনকে ধারণ করলেই দেশ ও জাতি সম্মানিত হবে; পুরো জাতির ভাগ্য বদলে যাবে। তাই এই রাতেই সকলকে অর্থ সহ কুরআন পড়া উচিত। কুরআনের শিক্ষাগুলি অবশ্যই ব্যক্তি ও সমাজের জীবনে প্রতিষ্ঠার জন্য শপথ হিসেবে নিতে হবে।
পড়ার নিয়ম:
নূন্যতম ৮ রাক'আত থেকে যতটা সম্ভব পড়া যায়। সুতরাং, সাধারণ সুন্নতের নিয়ম অনুসারে, দুই রাকাত নফল পড়ার নিয়ত দিয়ে নামাজ শুরু করতে হবে এবং এর জন্য সূরা ফাতিহার সাথে আপনার জানা যে কোন সূরার সাথে মিলিয়ে পড়লেই চলবে। সালাতুল তাওবা, সালাতুল হাজাত, সালাতুল তাসবিহ নামাজও আদায় করা যেতে পারে। এগুলির বিধি আপনি মাসআলা বইয়ে পাবেন। আমাদের অবশ্যই শেষ রাতে তাহাজ্জুদের কমপক্ষে ৮ রাকাত তেলাওয়াত করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ এই প্রার্থনা সর্বশ্রেষ্ঠ নফল নামাজ এবং রাতের এই অংশে দোয়া কবুল হয়। অধিক পরিমাণে নামাজের চেয়ে আমাদের নামাজের গুণগত মানের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
জিকির ও দো‘আ:
হাদীসে বর্ণিত কয়েকটি দো‘আ ও জিকির অধিক পুণ্যবান এবং অর্থ নির্বাচন করে বারবার পড়া যায়। ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) এবং দরুদ আল্লাহর নিকট অত্যন্ত প্রিয়। ইসতেগফার কমপক্ষে ১০০ বার এবং দরুদ ১০০ বার পড়া যেতে পারে। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল, যদি আমি কোনভাবে জানতে পারি যে রাতটি লাইলাতুল কদর, তবে আমি কি দোয়া করবো? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, “এই দোয়াটি তেলাওয়াত করবে - আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুব্বুন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।” এর অর্থ হলো, ‘হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মাফ করে দেয়াই তুমি পছন্দ কর। অতএব তুমি আমাদেরা গুনাহগুলো ক্ষমা করে দাও।
স্ব-সমালোচনা:
স্ব-সমালোচনা মানে স্ব-রায়। তার মানে আপনি নিজেকে পর্যালোচনা করুন। পিছনের দিনগুলিতে আপনারা কতকগুলি আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছেন, আপনি আল্লাহর দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলি কতটা সম্পাদন করেছেন এবং আপনি কতটা আন্তরিকতার সাথে এটি করেছেন, আপনি কোন বড় পাপ স্বেচ্ছায় এবং অনিচ্ছায় করেছেন? বান্দারূপে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য যা কিছু করেছিলেন তা ভাবুন। যা কিছু ভাল কাজ করেছেন তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে এবং যা ঘটেনি, তার জন্য আল্লাহকে ভয় করতে হবে। মন থেকে তওবা করতে হবে। আত্ম-সমালোচনা আমাদের বিবেককে জাগ্রত করবে। আত্ম-সমালোচনা আত্মশুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। মহান আল্লাহ বলেন- ‘হে ঈমানদার লোকেরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামীকালের জন্য (পরকাল) সে কি প্রেরণ করেছে তা চিন্তা করা’(সূরা হাশর : ১৮)
মোনাজাত করা:
মোনাজাতের মাধ্যমে বান্দা তার প্রভুর কাছে চায়। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দার প্রতি এত অনুগ্রহশীল যে বান্দা তার কাছে না চাইলে তিনি তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হন। ‘‘যে আল্লাহর নিকট কিছু চায় না আল্লাহ তার উপর রাগ করেন’- (তিরমিযি)। ‘দোয়া ইবাদতের মূল”- (আল হাদিস)।’ যার জন্য দোয়ার দরজা খোলা তার জন্য রহমতের দরজাই খোলা রয়েছে’- (তিরমিযি)। সুতরাং আমরা সর্বদা আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করব, ক্ষমা চাইব, করুণা চাইব, জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইব।
উপরের ইবাদতের মধ্য দিয়ে আমরা এই পবিত্র রাত্রি জাপন করতে পারি। আমরা যদি লাইলাতুল কদর পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আন্তরিকভাবে অনুসন্ধান করি তবে আল্লাহ আমাদের ইনশাআল্লাহ বঞ্চিত করবেন না। অবশ্যই ঘরে বসে ব্যক্তিগত উপাসনা করা মাসনুন। এইভাবে, আমাদের উপাসনা রিয়ার মন্দ থেকে রক্ষা পাবে (দেখানোর ইচ্ছা)। এই পবিত্র রাতটিকে কিছু অপ্রয়োজনীয় কাজ হতে দেখা যায়। এগুলো বন্ধে গঠনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।