শীত কমে হঠাত্ করেই একটু গরম বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। বিশেষ করে সর্দি। গরমে এ রোগীর দেখা মিলছে প্রায় প্রতিটি পরিবারে। গরমে ঘামার পর সেই ঘাম শরীরেই শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
আর শরীরে বসে যাওয়া এই ঠান্ডা থেকেই সর্দি গরমের উৎপত্তি। এ থেকে হতে পারে জ্বর, কাশি, মাথাব্যথা, সর্দির মতো অস্বস্তিকর রোগ। এই রোগের স্থায়িত্ব কম হলেও ভেতর থেকে শরীর দুর্বল করে ফেলে। এই দুর্বলতার ফলে রোগী পরবর্তী ধকল সামলে উঠতে অনেকেই পারেন না, আরো বড় কোনো ভাইরাস অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
তাই সাধারণ সর্দি গরমেই যদি নিজের একটু খেয়াল রাখতে পারেন, তাহলে পরবর্তী রোগের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়। বিশেষ করে খাবারের ব্যাপারে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই রোগ প্রতিরোধ করা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
১. মৌসুমি ফলমূল সর্দিকাশি প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। আঙুর, বাঙ্গি, তরমুজ, আনারস ইত্যাদি ফল খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখুন।খাদ্যতালিকায় রাখুন বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার। যেমন – অ্যাপ্রিকট, গাজর, ব্রকোলি ইত্যাদি। কারণ বিটা-ক্যারোটিন নাক ও ফুসফুসে সর্দি জমতে দেয় না।
২. ফ্লু বা ভাইরাস ফিভার হলে পথ্য হিসেবে চিকেন স্যুপ খুব কাজে দেয়। সর্দি গরম লাগলে রুচিও চলে যায়। এসময় গরম গরম চিকেন স্যুপ যেমন খেতে ভালো লাগবে তেমনি জমে থাকা সর্দিও সরিয়ে দিতে সাহায্য করবে।
৩. সর্দিগরমের সাথে যদি কাশি হয় তাহলে তুলসী ও আদার রস খুব উপকারে দেয়। ফুটন্ত পানিতে তুলসী পাতা ও আদা দিয়ে ভালো করে ফোটান। ঈষদুষ্ণ এই মিশ্রণ খুশখুশে কাশি দূর করবে ও বুকে কফ জমতে দেবে না।আধা চা চামচ দারুচিনির গুঁড়ার সাথে দুই চা চামচ মধু ও অল্প আদার রস মিশিয়ে খেতে পারেন।আদার রসের সাথে মধু ও মেথিগুঁড়া মিশিয়ে খান। গলাব্যথা থাকলে কমে যাবে।
৪. ফুটন্ত পানিতে দারুচিনি, লবঙ্গ, মধু, গোলমরিচ, থেঁতো করা তুলসী পাতা ও আদা দিয়ে ভালো করে ফোটান। হালকা গরম অবস্থায় বার বার চুমুক দিয়ে খান। সর্দি ভেতর থেকে বেরিয়ে যাবে। গলাব্যথাও কমে যাবে।
খাবারের পাশাপাশি বিশ্রামও আপনাকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করবে। দিনে অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমান। সর্দিগরম কমে যাওয়ার পরও কিছুদিন বিশ্রাম নিয়ে তারপর কাজে ফিরুন।
৫. সর্দিকাশি ও জ্বরের সাথে লড়তে সাহায্য করে ভিটামিন সি। সর্দিগরমের সময় রক্তে হিস্টামিন নামক এক প্রকার উপাদান বেশি বেড়ে যায়। ফলে নাকেমুখে একটা দমবন্ধ ভাব লাগে। ভিটামিন সি হিস্টামিনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এছাড়া ভিটামিন সি শ্বেত রক্তকণিকা মজবুত করে ইনফেকশন প্রতিরোধ করে। খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি যুক্ত খাবার রাখুন। সর্দিজ্বরের সময় লেবু, টমেটো প্রতিদিনের খাবারে খান। ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্টও খেতে পারেন।
৬. রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিও প্রতিরোধে সাহায্য করে। দুই টুকরা কাঁচা রসুন খান প্রতিদিন। গলা খুশখুশ করলে মুখে লবঙ্গ রাখতে পারেন। গলায় আরাম পাবেন, জিভের আড়ষ্টতাও কাটবে।
৭. সর্দিগরম লাগলে পানীয় গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খান। সাথে আদা চা, সরবত, ডাবের পানি, জুস, স্যুপ ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খান। কারণ তরল পদার্থ জমে থাকা সর্দি শরীর থেকে বের করে দিতে সহায়তা করে।
অতিরিক্ত কফি বা অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন, এ সময় অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে নিয়মকানুন মেনে চলুন। নয়তো শ্বাসনালি বা ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
অসুস্থতায় নিজের যত্নের পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শেরও প্রয়োজন আছে। ৪৮ ঘণ্টার পরেও জ্বর না কমলে ডাক্তার দেখান। কান, গলা বা মুখের কোনো অংশে যন্ত্রণা হলে, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হলে, হলুদ বা সবুজ কফ বেরোলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে ভূল করবেন না।
মীর মারুফ ফেরদৌস