করোনা ভাইরাস আসলে ভাইরাসের এমন এক প্রকার বিশেষ যা স্তন্যপায়ী প্রাণী ও পাখিদের মাঝে সংক্রমিত হয়। আর মানুষের মাঝে করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে আক্রমণ করে। ১৯৬০-এর দশকে মুরগির মধ্যে ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস হিসেবে এটি প্রথম প্রকাশ পায়। পরবর্তীতে সর্দি, হাচি, কাঁশিতে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে এর দুই প্রকার ভাইরাস দেখা যায় যা ”করোনাভাইরাস ২২৯ই” ”করোনাভাইরাস ওসি ৪৩” নামকরণ করা হয়েছিল। কিন্ত এটি বারবার এর রুপ পাল্টে ২০০৩ সালে ‘এসএআরএস-সিওভি’, ২০০৪ সালে ‘এইচসিওভি এনএল৬৩’, ২০০৫ সালে ‘এইচকেইউ-১’, ২০১২ সালে ‘এমইআরএস-সিওভি’ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সাল চীনে এসএআরএস-সিওভি-২’ যা কিনা বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক মহামারীর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
করোনা ভাইরাস এর
ভয়াবহতা
সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি, কাশির সাথে
সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে এবং এই ভাইরাস
দ্বারা দূষিত অংশ স্পর্শ
করার মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হয়।অন্যান্য
শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার মতোই করোনাভাইরাসও সর্দি,
কাশি, গলা এবং জ্বর
সহ হালকা লক্ষণ সৃষ্টি
করে। এর
সংক্রমণ কিছু লোকের জন্য
খুবই মারাত্মক হতে পারে।
এতে নিউমোনিয়া, শ্বাস প্রশ্বাস এবং
অঙ্গ অকার্যকরতার মতো ঘটনাও ঘটাতে
পারে। তবে
বিরল ক্ষেত্রে এই রোগ মারাত্মক
হয় বিশেষ করে বয়স্ক
লোক শিশুরা বা ইতিমধ্যে
অসুস্থ ব্যক্তিরা এই ভাইরাসের সংক্রমণের
ফলে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার
ঝুঁকিতে বেশি রয়েছে।
তবে খুব কম ক্ষেত্রেই
এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।
করোনা ভাইরাসের লক্ষণসমূহ
প্রথমে ফ্লু বা
সর্দি, কাশি, যা অনেক
বেশি সাধারণ বলে মনে
হতে পারে। এ
কারণেই কোনও ব্যক্তি কোভিড
-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে
কিনা তা খতিয়ে দেখা
খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি
লক্ষ্য করা জরুরি যে
প্রাথমিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলি প্রায় একই রকম। এর
মধ্যে ঘন ঘন হাত
ধোয়া এবং সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি
মেনে চলাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ,
কাশি বা হাঁচি দেওয়ার
সময় কনুই বা টিস্যু
ব্যবহার করা, ব্যবহৃত টিস্যুটিকে
নিকটবর্তী বন্ধ ময়লার বাক্সে
ফেলে দেয়া, বার বার
নাকে মুখে হাত দেয়া
থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি। এছাড়াও,
জ্বরের জন্য একটি ভ্যাকসিন
রয়েছে। অতএব,
নিজেকে আপনার পরিবার এর
বয়জৈষ্ঠ ব্যক্তিকে এবং আপনার শিশুকে
সময় মতো ভ্যাকসিন দেওয়ার
কথা মনে রাখবেন।
কোয়ারেনটাইন ও আইসোলেশন এর
ধারণা
কোয়ারেনটাইন: কোন ব্যক্তি সংক্রামক
রোগের সংস্পর্শে এসেছে কি না
তা নিরীক্ষণের জন্য, অন্যান্য ব্যক্তিদের
থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করা,
তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং তারা সংক্রামিত
বা আক্রান্ত কিনা তা পর্যবেক্ষণ
করতে কোয়ারেনটাইন ব্যবহার করা হয়।
আইসোলেশন: বিচ্ছিন্নতার মাধ্যমে সংক্রামক রোগগুলিকে অন্যান্য ব্যক্তিদের থেকে পৃথক রাখা
হয়। পার্থক্য:
সংক্রামক রোগের সংস্পর্শে আসা
ব্যক্তিদের পৃথক এবং নিয়ন্ত্রণ
করতে কোয়ারানটাইন ব্যবহার করা হয়;
বিচ্ছিন্নতার মাধ্যমে সংক্রামক রোগীদের আলাদা রাখা হয়। সুস্থ্য
ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট সংক্রামক রোগে আক্রান্ত কিনা
তা কোয়ারেনটাইনে পর্যবেক্ষণ করে। আর
আইসোলেশন অসুস্থ্য মানুষদের সুস্থ
হতে সাহায্য করে
যাতে অসুস্থ লোকদের জন্য
সুস্থ্য লোকদের মাঝে রোগটি
যেন না ছড়িয়ে পরে।
করোনার লক্ষণ দেখা
দিলে করণীয়
আপনার বা আপনার
বাচ্চার যদি জ্বর, কাশি
বা শ্বাসকষ্ট হয় তবে আপনার
অবশ্যই চিকিৎসা নিতে হবে।
আপনি যদি কোভিড -১৯
এ সংক্রামিত এমন কোনও অঞ্চলে
ভ্রমণ করছেন বা কোভিড
-১৯ এ সংক্রামিত এবং
শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতার লক্ষণ রয়েছে এমন
কারও সাথে যদি আপনার
ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয়, তবে স্বাস্থ্যসেবা
সরবরাহকারীর সাথে আগে কথা
বলুন। আর
নিম্নোক্ত নিয়ম কানুন মেনে
চলার চেষ্টা করুনঃ
- ঘন ঘন পরিষ্কার করুন (সাবান-জল বা হাত স্যানিটাইজার দিয়ে)
- কাশি শিষ্টাচার অনুসরণ করুন। কাশি দেয়ার সময়, নাক বা মুখটি টিস্যু বা বাহুর ভাঁজ দিয়ে ঢেকে দিন, একই সাথে ব্যবহ্রত টিস্যুটি নির্দিষ্ট পাত্রে ফেলে দিন এবং হাত মুছুন।
- যতদূর সম্ভব আপনার চোখ এবং নাক দিয়ে হাত স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন
- আপনার যদি জ্বর / কাশি / শ্বাসকষ্ট হয় তবে সুস্থ লোকদের থেকে দূরে থাকুন
- এই রোগটিতে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে যেতে পারে, তাই আক্রান্ত অঞ্চলে ভ্রমণের সময় যে কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। সুতরাং এমন কোনও স্থান ভ্রমণ করা এড়িয়ে চলুন
আপনার যদি জ্বর
/ কাশি / শ্বাসকষ্ট হয় এবং কোভিড
-১৯ আক্রান্ত একটি দেশে গত
১৪ দিনের মধ্যে ভ্রমণ
করেছেন বা করোনা ভাইরাসযুক্ত কোনও
ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন তবে দেরি
না করে নিকটস্থ সরকারী
হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।