Travel the world

Post Page Advertisement [Top]

ইসলামিক জ্ঞানরমজানরোজারোযাসাস্থ্যকথা

মানবিক ও সামাজিক জীবনে রমজানের রোজার গুরুত্ব


ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা তিন নম্বরে রয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা নিজের সাথে রোজার সম্পর্ক ঘোষণা করেছেন। তিনি সকল উপাসনা থেকে রোযাকে একটি বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। আরবি ১২ মাসের ৯ম মাস রমজান মাস। ফার্সি শব্দের ‘রোজা’ এর আরবি অর্থ ‘সাওম’, বহুবচন ‘সিয়াম’। রোজার বাংলা অর্থ হলো বিরত থাকা। ইসলামিক আইনে রোজা হলো আল্লাহর নির্দেশ পালনের লক্ষ্যে ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকা এবং স্ত্রীর সাথে সহবাস করা থেকে বিরত থাকা। রমজান ধৈর্যের এক মাস। আর ধৈর্যের পুরষ্কার জান্নাত। সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস এটি। এটি সেই মাস যে মাসে ঈমানদার বান্দার রিজিক বৃদ্ধি করা হয়। কেউ এই মাসে রোজাদারকে ইফতার করালে তা তার পাপ ক্ষমার এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবার কারণ হবে। এ ছাড়া তার পুরস্কার রোযাদারের সমান হবে।

রোজার প্রকারভেদ

পাঁচ ধরণের রোজা রয়েছে।

ফরজ রোজা:

ফরজ রোজা চার ধরণের রয়েছে। ক) রমজান মাসে রোজা রাখা খ) যে কোনও কারণে রমজানের রোজা ভাঙলে কাযা আদায় করা গ) শরিয়তে স্বীকৃত কোন কারণ ছাড়াই যদি রমজানের রোজা ভঙ্গ হয় তবে ৬০টি রোযা কাফফারা হিসাবে রাখা ঘ) কেউ রোজা রাখার নিয়ত করে তা পূর্ণ করা।

ওয়াজিব রোজা: 
নফল রোজা রেখে পরে তা ভাঙলে তা পরবর্তীতে রাখা ওয়াজিব 
সুন্নাত রোজা: 
মহররমের ৯ ম এবং ১০ম দিন রোযা রাখা সুন্নাত।

মোস্তাহাব রোজা:

প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, এবং ১৫ তারিখ প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার কিছু ইমামের মতে শাওল মাসে প্রতি সপ্তাহে পৃথক ২টি থেকে ৬টি রোজা পালন করা মোস্তাহাব। তবে ইমাম আবু হানিফার মতে শাওয়াল বা ঈদুল ফিতরের দিন রোজা রাখা জায়েয নয়।

নফল রোজা:

মুস্তাহাব ও নফল ইবাদতের খুব নিকটতম আমল। সরল অর্থে নফল হল ফরজ, ওয়াজিব, ব্যতীত নেকী বা ইবাদতের উদ্দেশ্য নিয়েই করা হয়। রোজার ক্ষেত্রেও একই। রোজার শারীরিক এবং মানসিক সুবিধা

ফ্যাট হ্রাস করে:

গ্লুকোজের অত্যধিকতা হ্রাস করে। যখন গ্লুকোজ কম থাকে, তখন শরীরে কেটোসিস নামে একটি জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া শুরু করে, যা চর্বি হ্রাস করে এবং দেহে শক্তি সরবরাহ করে। এমনকি কিডনি বা পেশীগুলিতে জমা হওয়া চর্বিও হ্রাস পায় এবং শরীরে শক্তি তৈরি হয়।

রক্তচাপ হ্রাস করে:

ওষুধ ছাড়াই রক্তচাপ কমানোর একটি উপায় হলো রোজা রাখা। কারণ রোজা রাখলে, গ্লুকোজ, ফ্যাট কোষগুলি হ্রাস করে এবং শক্তি উৎপাদন করে থাকে। রোজা রাখলে মেটবলিক হারও হ্রাস করে। অ্যাড্রিনালিন এবং নোরঅ্যাড্রিনালিন মতো স্ট্রেস হরমোনগুলো হ্রাস করে । এর মধ্যে বিপাকের হার স্বাভাবিক পর্যায়ে থেকে যায়। ফলস্বরূপ রক্তচাপ হ্রাস পায়। এবং ধমনীতে এথেরোস্ক্লেরোসিস বা ফ্যাট জমা হওয়ার প্রক্রিয়াতে এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করে।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি:

রমজানে রোজা নিঃসন্দেহে শরীর এবং মনের মধ্যে এক ধরণের ইতিবাচক অনুভূতি তৈরি করে। একদল আমেরিকান বিজ্ঞানী দেখতে পেয়েছেন যে রমজানে রোজা নতুন কোষের জন্ম দেয়। ফলস্বরূপ, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, কোটিসল নামে একটি হরমোন রয়েছে যা আর্ডনালিন গ্রন্থিগুলো থেকে বের হয় এর পরিমাণ হ্রাস করতে পারে। এর ফলস্বরূপ, পুরো রমজান মাসে এবং রমজানের পরেও মানসিক কম চাপ থাকে।

হজমের বিশ্রাম:

শরীরের যে অঙ্গগুলি খাদ্য হজমে কাজ করে তারা রোজার সময় কিছুটা বিরতি পায়। হজম হয় ধীর। খাবার ধীরে ধীরে ভেঙে যায়। এটি শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় রাখতে খুব সহায়ক। তারপরে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়। তবে রোজা রাখলেও পেটের অ্যাসিডের নিঃসরণ কমে যায় না। এ কারণেই চিকিৎসকরা পেপটিক রোগীদের রোজার সময় সাবধান হওয়ার পরামর্শ দেন।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে:

রোজার সময় একজন ব্যক্তির শরীর গ্লুকোজ দ্রুত ভেঙে দেয় এবং দেহের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উত্পাদন করে। ফলস্বরূপ, অগ্ন্যাশয়ে উত্পাদিত ইনসুলিনের উত্পাদন হ্রাস পায়। ফলস্বরূপ, শরীরে রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস পায় এবং এটি অ্যান্টি-ডায়াবেটিস হিসাবে কাজ করে।

হজম শক্তির উপর রোজার প্রভাব:

রোজা এক মাস ধরে হজম প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত অঙ্গগুলিকে স্বস্তি দেয়। তবে হজমে লিভারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রোজা লিভারের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। কারণ, খাদ্য হজম করার পাশাপাশি, লিভার পনেরোটি অতিরিক্ত কার্য সম্পাদন করে। ফলস্বরূপ, লিভার ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এই হজম প্রক্রিয়া রোজার মাধ্যমে চার থেকে ছয় ঘন্টা বিশ্রাম নেয়। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দাবি করা হয় যে, লিভারের জন্য বছরে কমপক্ষে এক মাস বিশ্রাম কাল হওয়া উচিত। কারণ লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সময়টি রমজান মাসে ন্যস্ত করা হয়।

রমজানের সামাজিক প্রভাব:

ইসলাম গরিবদের জন্য ন্যায়বিচার, ন্যায্য এবং ভালবাসার নীতিগত দিক সম্পর্কে শেখায়। পেট ভরলে অন্যের ক্ষুধা অনুভব করা যায় না। রমজান মুসলমানদেরকে দরিদ্রদের প্রতি সহানুভূতি, মমত্ববোধ এবং সহানুভূতির শিক্ষা দেয়। এবং তারা প্রত্যেকেই ইসলামী সমাজের একটি অংশ।

Bottom Ad [Post Page]

| Designed by Colorlib